পর্ব-৩: যেভাবে ইসরায়েল নামের ইহুদী রাষ্ট্রটির জন্ম হল (কলঙ্কিত ইতিহাঁস) - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

পর্ব-৩: যেভাবে ইসরায়েল নামের ইহুদী রাষ্ট্রটির জন্ম হল (কলঙ্কিত ইতিহাঁস)

পর্ব-৩: যেভাবে ইসরায়েল নামের ইহুদী রাষ্ট্রটির জন্ম হল (কলঙ্কিত ইতিহাঁস)

Share This
মোঃ গোলজার হোসেন: অনলাইন রাইটার এন্ড কলামিস্ট 
সকলকে আমার ব্লগে স্বাগতম। আশা করি সকলে ভাল আছেন। বর্তমান পৃথিবী বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো বিশ্ব মোড়ল ও তাদের ক্রীড়ানকদের দ্বারা সৃষ্ট এক অশান্ত ও অস্তিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছে। বলা হয়ে থাকে যে, আমরা আরব বিশ্বে যে অস্থিতিশীল ও অশান্ত পরিবেশ লক্ষ্য করছি তার মূলেই রয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট। বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার  একচোখা নীতি আর ক্রমাগতভাবে মুল পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলার  কারনেই আজ ফিলিস্তিনীরা নিজ দেশে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, যেখানে তারা বহুকাল আগে থেকে বসবাস করে আসছিল। আমি আমার আজকের এই লেখনীতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আর তা হল কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরায়েল নামক ইহুদি রাষ্ট্রটির জন্ম হল।  আশা করি আমার  এই ধারাবাহিক লেখনী আপনাদের জ্ঞান তৃঞ্ষার সামান্যতম হলেও মেটাবে। আর তা পারলেই আমি আমার শ্রমকে স্বার্থক বলে মনে করব। গঠন মুলক মন্তব্য পেলে উৎসাহিত হব।


ইসরায়েল। পূর্বে জর্ডান, দক্ষিণ-পশ্চিমে মিসর, উত্তরে লেবানন ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তে সিরিয়া  বেস্টিত এ দেশটি ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। ইসরায়েলের দক্ষিণে রয়েছে বিশাল নেগেভ মরুভূমি আর উত্তরে আছে বরফাবৃত পর্বতমালা। দক্ষিণে লোহিত সাগরে আছে এক চিলতে প্রবেশপথ,  যারপরনাই  এমন ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে এই রাস্ট্রের অবস্থান যা বর্তমান পৃথিবীর ভূ রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকটাই কৌশলগত।



ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা কিভাবে এ বিষয়ে বলতে গেলে অনেক পেছনে চলে যেতে হয়। বলে রাখা ভাল, ইসরায়েল রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয় কোনরুপ যুদ্ধবিগ্রহ করে নয় বরং জাতিসংঘের কন্সটিটিউশন এবং চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে। একটি বিষয় স্পষ্ট করা  দরকার, ইহুদিরা আসলে একটি নৃতাত্ত্বিক জাতি।  ইহুদিদের আদি নিবাস বর্তমানের সিরিয়া-জর্ডান-লেবানন-ইসরাইল-ফিলিস্তিন অঞ্চল। কিন্তু ইতিহাসের নানা সময় নিপীড়নের শিকার হয়ে ইহুদিরা এই অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয় এবং সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। উনবিংশ শতাব্দীতে অধিকাংশ ইহুদি বসবাস করত ইউরোপজুড়ে। বিশেষত জার্মান ও রুশ অঞ্চলে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপে খ্রিস্টধর্মানুসারীদের সঙ্গে ইহুদিদের ওপর নতুন নিপীড়ক হিসেবে অবতীর্ণ হয় জাতীয়তাবাদীরা। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ইহুদি নেতারা তাদের আদি ভুখন্ডে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। এর মূল লক্ষ ছিল ইহুদিরা তাদের আদি ভূখণ্ডে ফিরে যাবে।

ইউরোপের ইহুদীরা গড়ে তোলে জায়ানিস্ট সংঘ। জায়ানিস্ট সংঘ সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়, তাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ইহুদীদের জন্য আলাদা আবাসভূমি এবং যদি সম্ভব হয় তা তাদের আদি নিবাসেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে তৎকালীন তুরস্ক থেকে গ্লিসারিন এর বানিজ্য করত ইউরোপের বনিকেরা যা ইউরোপের সমরাস্ত্র যুদ্ধাস্ত্র এর চালিকাশক্তি বলে বিবেচিত হত, কিন্তু তুরস্কের গ্লিসারিন বানিজ্য বন্ধ ঘোষণা করলে নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে অটোম্যানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ব্রিটিশ বাহিনী। এসময়ই ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হয় ইহুদী বিজ্ঞানী ডঃ ‘কাইম অয়াইজম্যান’। তিনি এসিটোন আবিস্কার করে এর ফর্মুলা ব্রিটিশদের কাছে  প্রকাশ করেন যা গ্লিসারিন এর পরিবর্তে সমরাস্ত্র ঠিক রাখার কাজের ব্যাবহৃত হয় এবং বিনিময়ে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইহুদীদের জন্য আলাদা আবাসভূমির দাবি করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বর্তমান ইসরাইল-ফিলিস্তিন অঞ্চল অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মুসলমান শাসকদের অদূরদর্শিতা এবং ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রের কারণে তুরস্কে মুসলিম খিলাফত ভেঙ্গে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ বাহিনী ১৯১৭ সালে ইরাক, সিনাই উপত্যকা,ফিলিস্তিন ও পবিত্র জেরুজালেম দখল করে নেয়। অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর বর্তমান ইসরাইল, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন অঞ্চলগুলো ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের ম্যান্ডেটের অধীন চলে যায়। এই সময়েই জায়ানিস্ট সংঘের তৎপরতা বাড়তে থাকে এবং ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিদের আদিভূমি ফিলিস্তিন অঞ্চলে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন তীব্রতর হয়। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী । ‘আর্থার জেমস’  বালফোর ইহুদীবাদীদেরকে লেখা এক পত্রে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি করেন যা বেলফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। ব্রিটিশদের এই ঘোষণার কারণ হিসেবে দুইটি বিষয় মানা হয়, একেতো এসিটোন এর ফর্মুলা প্রদান করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অভাবনীয় সাফল্য পায় ব্রিটিশ বাহিনী,সেই সাহায্যের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এবং সেই সাথে ব্রিটিশরা চাইনি ইহুদীদের ইউরোপে জায়গা দিয়ে জঞ্জাল সৃষ্টি করতে। কারণ তারা জানতো ইহুদীরা ঐতিহ্যগতভাবেই ক্ষমতালিপ্সু,বেঈমান জাতি যারপরনাই ইহুদীদের জন্য আলাদা রাস্ট্র প্রতিষ্ঠায় তারা আগ্রহী ছিল। এছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক ঘটনা ইহুদিদেরকে তাদের নিজ রাষ্ট্র গঠনের দিকে প্রলুব্ধ করেছিল এবং তাদের মনে হয়েছিল তাদের পূর্বপুরুষদের স্বদেশভূমিই তাই তাদের জন্য সঠিক স্থান। ইউরোপের তৎকালীন ইহুদিরা যারা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা ইহুদিদের শতকরা 90 ভাগ ছিল তারা প্রায় সকলেই ইহুদীবাদের ছায়া চলে এসেছিল কারণ তারা প্রথমতঃ বুঝতে পেরেছিল ইউরোপে দিনকে দিন ইহুদি বিদ্বেষের মাত্রা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের নাই ছড়িয়ে পড়ছিল দ্বিতীয়তঃ এই ইহুদি বিদ্বেষের কারণেই তাদের মধ্যে একটা স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদের উন্মেষ হয়েছিল। যা তাদের ইহুদীবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। 1896 সাল হতে 1948 সাল পর্যন্ত হাজার-হাজার ইউরোপীয় ইহুদি ইউরোপ থেকে ইসরাইলে এসে জড়ো হতে থাকে যা তখন ব্রিটিশদের অধীনে স্বাধীন ফিলিস্তিন নামে পরিচিত ছিল। এদের মধ্যে তারাও ছিল যারা ইউরোপে গণহারে ইহুদী নিধনের সময় ইউরোপ হতে বিতাড়িত হয়েছিল।

বহু আরব জনগণ ইউরোপ থেকে আসা

ইহুদিদের এই ঢলকে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী আন্দোলন হিসেবেই মনে করেছিল এবং দুই গ্রুপের মধ্যে প্রবল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে গিয়েছিল যা ব্রিটিশরাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। অবশেষে 1947 সালে জাতিসংঘের ভোটাভুটির মাধ্যমে একটি দেশকে ভেঙ্গে দুটি দেশে পরিণত করা হয়। প্রায় 650000 ইহুদি পার্শে প্রদর্শিত ম্যাপের নীল অংশে গিয়ে জড়ো হয় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব জনগণ যারা তৎকালীন ইহুদিদের প্রায় দ্বিগুণ ছিল তারা পেল মাত্র কমলা রং চিহ্নিত অংশসমুহ। 

পৃথিবীর ইতিহাসে মঞ্চস্থ হলো এক নতুন নাটক। জাতিসংঘের নেই মত একটি সংগঠন ব্রিটিশদের ক্রীড়ানক হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভূমি দখল করে তার অভ্যন্তরে আরেকটি রাষ্ট্রের জন্ম দিল যার নাম হলো ইসরাইল-মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া। ইহুদি আশ্রয়গ্রহণকারীরা এই চুক্তিকে সানন্দে গ্রহণ করলেও  আরব ও ফিলিস্তিনিরা এটিকে দীর্ঘ মেয়াদে আরব বিশ্বে ইহুদী সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা, তাদের ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ ও তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গভীর ষড়যন্ত হিসেবে নিয়েছিল। মিশর জর্ডান ইরাক এবং সিরিয়ার মত আরবদেশগুলো এই নিয়ে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে । কিন্তু এই যুদ্ধেও আরবদেশগুলো কৌশলগত ভুল করে বসে। তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষার জন্য তারা তেমন কিছুই করেনি। ফলে যা হবার তাই হল, বৃটিশদের মদদপুষ্ট ইসরায়েল  ফিলিস্তিন মিলিশিয়া আরব সেনাবাহিনীকে রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ ও সংঘাতের মাধ্যমে পরাস্ত করল। ফলশ্রুতিতে ৭ লাখ  ফিলিস্তিনি
হলো দেশত্যাগী আর যারা রয়ে গেল তারা হল নিজ দেশে পরবাসী। 



জাতিসংঘের বিভাজন অনুযায়ী ব্রিটিশ শাসিত ফিলিস্তিনের শতকরা ৫৬ ভাগ ভুমি ইসরায়েলে হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু এ যুদ্ধের ফলে পশ্চিম তীর, জর্ডান নিয়ন্ত্রিন জেরুজালেমের পশ্চিমের জেলা ও মিশর নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকা ছাড়া মোট ফিলিস্তিনের শতকরা ৭৭ ভাগ জায়গা ইসরায়েল নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে। হায়রে বিশ্ব বিবেক!  জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে  ইসলায়েল নামের একটি রাষ্ট রেখে গেল আর ফিলিস্তিনীদের জন্য কাচঁকলা..........। 
আমরা মুসলিম বিশ্ব ও নিজ দেশে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা আজ বলির পাঁঠা।.

To be Contnued...........

Next------>>>> 

No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages