 |
মোঃ গোলজার হোসেন- অনলাইন রাইটার এন্ড কলামিস্ট |
সকলকে আমার ব্লগে স্বাগতম। আশা করি সকলে ভাল আছেন। বর্তমান পৃথিবী বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো বিশ্ব মোড়ল ও তাদের ক্রীড়ানকদের দ্বারা সৃষ্ট এক অশান্ত ও অস্তিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছে। বলা হয়ে থাকে যে, আমরা আরব বিশ্বে যে অস্থিতিশীল ও অশান্ত পরিবেশ লক্ষ্য করছি তার মূলেই রয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট। বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার একচোখা নীতি ক্রমাগতভাবে মুল পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলার কারনেই আজ ফিলিস্তিনীরা নিজ দেশে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, যেখানে তারা বহুকাল আগে থেকে বসবাস করে আসছিল। আমি আমার এই লেখনীতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আর তা হল কেন ইসরায়েল আর ফিলিস্তিন দুটি জাতি একটি ভুখন্ডকে নিয়ে তাঁদের নিজ নিজ দাবিতে অনড়? আর কেনই বা ইসরায়েল ফিলিস্তিনীদের অধিকারকে পায়ে দলে একে অপরের অধিকার ছিনিয়ে নিতে তৎপর? আশা করি আমার এই ধারাবাহিক লেখনী আপনাদের জ্ঞান তৃঞ্ষার সামান্যতম হলেও মেটাবে। আর তা পারলেই আমি আমার শ্রমকে স্বার্থক বলে মনে করব। গঠন মুলক মন্তব্য পেলে উৎসাহিত হব।
লাখ লাখ ফিলিস্তিনীর রক্ত পান করে ভু-মধ্যসাগরের পূর্ব তীরে পৃথিবীর একমাত্র ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েল, যার পুরোটাই ফিলিস্তিনিদের নিকট হতে কেড়ে নেওয়া ভুখন্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত। যার মূল ভিত্তিই হল যাইওনিজম ও জুডাইজম নামক দুটি উগ্র ধর্মীয় মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। আরব ফিলিস্তিনীরা যারা এই জমির মালিক তারা এখন অবরুদ্ধ। আর পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে ইসরায়েল। মুলতঃ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ এখন মুলত কে কার ভূ-খন্ড, কতটুকু পাবে আর তা কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে এ নিয়ে। অর্থাৎি বিশ্বমোড়ল আমেরিকার একচোখা নীতির কারনে ফিলিস্তিনীরা তাদের নিজ ভুমিতে ইসরায়েলের দখল দরিত্ব একরকম মেনেই নিয়েছে বা নিতে বাধ্য হয়েছে। আর ক্রমাগত আসকারা পাওয়া ইসরায়েল চাইছে দখলদারিত্ব জারি রেখে ফিলিস্তিনীদের অবশিষ্ট ভূ-খন্ডটুকুও গ্রাস করতে। আর নিয়তি কি নির্মম পরিহাস আমেরিকা ইসরায়েল দখলদারিত্বকে সমর্থন করেও সে এখন অবধি নির্লজ্জ্বের মত এই দু-পক্ষের মধ্যে প্রধান মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব পালন করছে। ফলে প্রতিদিনেই ঝরছে নিরিহ ফিলিস্তিনীর প্রাণ।
যদিও ইহুদি ও আরব মুসলিমরা হাজার বছর ধরে এই ভুমিতে তাদের মালিকানা দাবি করে আসছিল। তবে মূল রাজনৈতিক দ্বন্দটা শুরু হয় মূলতঃ বিংশ্ব শতাব্দীর গোড়ার দিকে। যখন ইহুদিরা ইউরোপজুড়ে ইহুদী নিধন হতে বাঁচতে তাদের জন্য একটি ভু-খন্ড প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিল যেস্থানটিতে অটোমান সাম্রাজ্য ও বিটিশ আমলেও আরব ও মুসলিমরা সংখ্যা গরিষ্ঠ ছিল। আরবরাও এই চক্রান্তের বিরোধীতা করেছিল এবং এই ভু-খন্ডটি তাদের অর্থাৎ মুসলমানদের অধিকার হিসেবেই দেখছিল। আর তাই এই ভূ-খন্ডটি দু-ভাগ করে দুটি বিবাদমান গ্রুপের হাতে তার নিয়ন্ত্রন তুলে দেওয়ার জাতিসংঘের গোড়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং ইসরায়েল ও তার চারপাশে থাকা আরব দেশগুলোর সাথে এই নিয়ে বেশ কয়েক বার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আজ ইসরায়েল রাষ্টের যে সীমারেখা আমরা প্রত্যক্ষ করছি তা মূলতঃ ১৯৪৮ এবং ১৯৬৭ সালে যুদ্ধের ফল।
আজকের এই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দ্বন্দের মূল নিহিত রয়েছে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের মাঝে যার ফলে পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার মত ফিলিস্তিনি সংখ্যাধিক্য অঞ্চল দুটি চলে যায় ইসরায়েলে নিয়ন্ত্রনে।
আজ, পশ্চিম তীর ইসরায়েলী দখলদারিত্বের অধীনে নামে মাত্র ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রন করে। আর এটা তারা করে থাকে ইসরায়েলী সেনাবাহীনির কড়া চোখ রাঙানী আর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। আর এখানে ক্রমাগতভাবে রাষ্ট্রীয় মদদে ভুমি দখলকারী ইহুদি বাসিন্দারা ফিলিস্তিনিদের চোখের সামনে তাদের বাড়ী-ঘর গুঁড়িয়ে দেয়। এবার আসি গাজা উপত্যকার কথায়, এই ভুখন্ডটুকু ইসরায়েলী সেনাদ্বারা বেস্টিত হলেও মুলত তা নিয়ন্ত্রন করে তথা-কথিত ইসলামী মৌলবাদী দল হামাস। তাদের প্রচন্ড প্রতিরোধের কারনে ইসরায়েল এখানে তাদের সরাসরি দখলদারিত্ব কায়েম করতে পারেনি।
এই দ্বন্দ ও সংঘাতের আজকে যে সমাধানের কথা আন্তর্জাতিক মহলে সবচেয়ে বেশি আলোচিত তা হল, তথাকথিত দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক(two-state solution) সমাধান যার অধীনে গাজা ও পশ্চিম তীরের অধিকাংশ জায়গা নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে। আর বাকীটুকু ইসরায়েলকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও এই দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক পরিকল্পনা এখনও তাত্ত্বিক ভাবেই রয়েগেছে কারন এটা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়েও দু-পক্ষের মাঝে বিস্তর বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়।
অান্তজার্তিক মহল অবশ্য দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিকল্প হিসেবে আর একটি দিক নিয়েও চিন্তা করছেন তা হল একরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান যাতে পুরো ভূ-খন্ডটি একটি অবিভক্ত প্যালেস্টাইন বা অবিভক্ত ইসরায়েল নামে পরিচিত হবে। কিন্তু অধিকাংশ পর্যবেক্ষকদের মতে বিকল্প এই সমাধানটি প্রথমটির থেকে আরও জাটিল । আর সেটা রাজনৈতিক ও ডেমোগ্রাফিক কারনে। কারন, এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রটির নাম যাই হোউক না কেন, কালে ভদ্রে ফিলিস্তিনিরাই তাতে লাভবান হবে। কারন সারা পৃথিবী হতে ইহুদিদের এনে একত্রিত করা হলেও তা এখানে বসবাস রত ফিলিস্তিনিদের সমান হবেনা বরং ইসরায়েলীরা এখানে সংখ্যা লঘু হবে। প্রবল দাম্ভিক ইসরায়েল তা কখনো মেনে নেবে বলে আমার মনে হয় না।
To be Continued.................
No comments:
Post a Comment