ফাইল ছবি
রাজনৈতিক কোন্দল, যুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, জোট ভাঙ্গন বিভিন্ন কারণে গত এক শতাব্দীতে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে অনেক দেশ, আবার অনেক নতুন দেশ ঠাই পেয়েছে পৃথিবীর বুকে। বিলীন হয়ে যাওয়া এমন কিছু দেশ সম্পর্কে জানাব আজ।
যুগস্লাভিয়াঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবেই বলা যায় , আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে; অসট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে ১৯১৮ সালে দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপে সার্বিয়া, ক্রয়োশিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং কসোভো- এই দেশগুলো মিলে এক নতুন রাজ্যের জন্ম হয়। ১৯২৮ সালে দেশটির নাম দেয়া হয় যুগোস্লাভিয়া। কিন্তু একজোট হওয়ার পর যুগোস্লাভিয়া আরও বেশি শত্রুতার সম্মুখীন হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধের পর দেশটি কিংবদন্তি যুগস্লাভিয়ান সাম্যবাদী নেতা মার্শাল টিটোর অধীনে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১৯৮০ সালে টিটোর মৃত্যুর পর বিভিন্ন অন্তরকলহের ফলে ১৯৯২ সালে যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে যায় এবং সদস্য দেশগুলোতে ভাগ হয়ে যায়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সার্বিয়ার অধীনে আর না থাকার ঘোষণা দেয় কসোভো, তারাই সর্বশেষ স্বাধীন যুগোস্লাভ দেশ।
# তিব্বতঃ
শান্তির দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও অসংখ্য বুদ্ধ ভিক্ষু এবং দালাই লামার এ দেশটি অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ এর মধ্য দিয়ে গিয়েছে এবং এখনো যাচ্ছে। ১৯১২ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত তিব্বত ছিল একটি স্বাধীন দেশ, যতদিন না এটি চীন কর্তৃক অধিকৃত হয়। ` স্বাধীন তিব্বত ` নামে আন্দোলন আজও বিভিন্ন জায়গায় পরিচালিত হচ্ছে। এবং তিব্বতের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী নেতা দালাই লামা অবসরে গেলেও এখনো ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। দেশটি পরাধীন হয়ে গেলেও ভ্রমণপিপাসু এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান। প্রায় ৩০০০০ হাজার ফুট উঁচুতে পৃথিবীর সবচে` উঁচু শৃঙ্গ এভারেস্ট যে তিব্বত এবং নেপালের সীমান্তেই অবস্থিত!
দালাই লামার কথা বলতে গিয়ে তার একটি বিখ্যাত উক্তি উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছি না , "জন্ম এবং মৃত্যু - মানবজীবনের এইদুইটি গুরুত্বপূর্ণ সময়েই আমরা অন্যের দয়ারউপর নির্ভর করি। তাই মাঝের সময়টাতেঅন্যকে দয়া করা মানুষের কর্তব্য। "
আবিসিনিয়াঃ
ইসলামিক বইপত্রে এই দেশটির উল্লেখ অনেকেই পেয়ে থাকবেন। আবিসিনিয়া আসলে ইউরোপ এবং আরবে `ইথিওপিয়া` দেশটির ডাক নাম। ১৯ শতকে ইতালি অনেক চেষ্টা করে আবিসিনিয়া দখল করতে ব্যর্থ হয়। আসলে ইথিওপিয়া যে দেশটি আফ্রিকার শিং নামে অধিক পরিচিত, কখনোই কারো উপনিবেশে পরিণত হয় নি। ১৯৩০ এ ইতালিয়ান নেতা মুসোলিনী আংশিকভাবে ইথিওপিয়া দখলে সমর্থ হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশবযুদ্ধের পর জাতিসংঘ গঠনে যে দেশগুলো ভূমিকা রেখেছে, ইথিওপিয়া তার মধ্যে অগ্রগণ্য। সুপ্রাচীণ ইতিহাসে সমৃদ্ধ ইথিওপিয়াতে পাওয়া গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন মানুষের ফসিল। ইথিওপিয়ার লাভা হ্রদ পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গম জায়গাগুলোর একটি।
চেকোস্লভাকিয়াঃ
এই দেশটিও যুগোস্লাভিয়ার মত ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে গঠিত হয়। পূর্ব ইউরোপের তিন দেশ মোরাভিয়া, স্লোভাকিয়া এবং বহেমিয়া; অস্ট্র-হাংগেরিয়ান সাম্রাজ্য থেকে বেরিয়ে এ দেশটি গঠন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান অক্ষ শক্তির পক্ষে যুদ্ধে অংশ নেয় দেশটি। ১৯৯৩ সালে শান্তিপূর্ণভাবেই চেকোস্লোভাকিয়া ভেঙ্গে চেক রিপাবলিক এবং স্লোভাকিয়া নামের দুইটি দেশের জন্ম হয়। চেক প্রজাতন্ত্র বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশ বলে খ্যাত, এর অনিন্দ্য সৌন্দর্যের জন্য একে বলা হয় রূপকথার রাজ্য!
সিলনঃ
প্রতিবেশী শ্রীলংকার কথা তো সবাই জানেন, ১৯৭২ এর আগ পর্যন্ত এই দেশটিই সিলন নামে পরিচিত ছিলো। ইউরোপের উপনিবেশভুক্ত হওয়ার পর ইউরোপিয়ানরাই এ নামটি রেখেছিলেন। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা পায় সিলন এবং ১৯৭২ সালে নাম পরিবর্তন করে শ্রীলংকা রাখা হয়। বেশ কিছু গৃহযুদ্ধের পর (তামিল টাগারসের নাম অনেকেই জেনে থাকবেন) দেশটির অবস্থা এখন স্থিতিশীল। উপনিবেশবাদের সব চিহ্ন মুছে ফেলার উদ্যোগ হিসেবে ২০১১ সালে শ্রীলংকান সরকার সিলন নামধারী সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। শ্রীলংকা এখন এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা ট্যুরিস্ট স্পট।
অটোম্যান সাম্রাজ্যঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত অটোম্যান সাম্রাজ্যের বেশ দাপট ছিলো পুরো বিশ্বে। কিন্তু ১৯২৩ সালের দিকে এ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন ধরে এবং তৎকালীন অটোম্যান খলিফা কামাল আতাতুরক আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব ইউরোপ , উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৬০০ বছর যাবত অটোম্যান সাম্রাজ্যের ক্ষমতা টিকে ছিলো। তুরস্কও এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজার এখনো দাঁড়িয়ে আছে হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে।
সিকিমঃ
হিমালয়ের এই ছোট্ট এলাকার নাম নিশ্চয় অনেকেই শুনে থাকবেন। ১৬৪২ সাল থেকে ১৯৫০ অবধি, ভারতের রক্ষণাবেক্ষণে যাওয়ার আগ পর্যন্ত; সিকিম ছিল একটি আলাদা সাম্রাজ্য। ১৯৭৫ সালে সিকিমকে ভারতের একটি রাজ্য বলে ঘোষণা করা হয়। তুষারময় সিকিমের সাথে নেপাল, ভুটান ও তিব্বত (চীন) এর সীমান্ত রয়েছে।
সিয়ামঃ
ভাবছেন এই দেশটি এবার কোত্থেকে এলো? বর্তমান থাইল্যান্ডই হলো আগেকার সিয়াম। ১৯৩৯ সালে এর নতুন নামকরণ করা হয়। এশিয়ার এ অঞ্চলের মধ্যে থাইল্যান্ডই কখনো ইউরোপিয়ান উপনিবেশে পরিণত হয়নি। বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সিয়াম ছিল একটি অভেদ্য সাম্রাজ্য। উল্লেখ্য থাইল্যান্ডে এখনও সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান। এখানকার শতাধিক দ্বীপ, স্বচ্ছ জল এবং চোখ ধাঁধানো উপকুল, এসবের জন্য থাইল্যান্ড আজ পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ/টিআরএইচ
No comments:
Post a Comment