বেসরকারী পেনসন যেমন হবে - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

বেসরকারী পেনসন যেমন হবে

বেসরকারী পেনসন যেমন হবে

Share This

২০১৮- ২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি খাতে পেনশন ব্যবস্থার বিষয়ে রূপরেখা থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি জানান, উন্নত বিশ্বের মতো সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বলেছিলেন, সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সবার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে সারা দেশে এটা বাস্তবায়নের মতো অবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই আমি চিন্তা করছি, ন্যাশনাল সার্ভিসের মতো সারা দেশে না করে, একটা এরিয়া ঠিক করে সেখানে শুরু করা যায় কি-না। এই মুহূর্তে আমরা সারাদেশে কাভার করি ৮ লাখ। এটা একেবারেই ছোট সংখ্যা।

সূত্র জানায়, সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতির খসড়া কাঠামো চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ পদ্ধতি কার্যকর হলে বেসরকারি খাতে যারা চাকরি করেন, সরকারি চাকরিজীবীদের মতো পেনশন সুবিধা পাবেন তারাও। তবে দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ কার্যকর হতে কমপক্ষে তিন-চার বছর সময় লাগবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত 'সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতি'র খসড়া কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়েছে। খসড়া কাঠামোতে কীভাবে এ ব্যবস্থা পরিচালনা করা যায়, সে বিষয়ে বিশদ রূপরেখা তুলে ধরা হবে। আগামী ২০১৮-১৯ বাজেটে এটি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন মুহিত।

এ পদ্ধতি কার্যকর হলে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বেসরকারি খাতে যারা চাকরি করেন, মাসিক পেনশন সুবিধা পাবেন তারাও। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতি বাস্তবায়নের কাজ আগামী অর্থবছর থেকে শুরু হবে। দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ কার্যকর হতে কমপক্ষে তিন-চার বছর সময় লাগবে। তারপরই এর সুফল মিলবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, আগে সিদ্ধান্ত ছিল সরকারি চাকরিজীবীরা সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় থাকবেন। এখন সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুধু বেসরকারি চাকরিজীবীদের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয় নতুন করে। এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত খসড়া কাঠামোতে সুবিধাভোগীর আওতা ব্যাপক বাড়ানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়ায় বেসরকারি খাতের প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল চাকরিজীবীকে এ আওতায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়া গরিব জনগণ যারা নিয়মিত আয় করেন, তারা যেন সুবিধা পেতে পারেন সে ব্যবস্থা থাকছে।



অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, প্রস্তাবিত পেনশন তহবিল হবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। অর্থাৎ চাকরিজীবী ও নিয়োগ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এ তহবিলে অর্থ জোগান দেবে। এর পরিমাণ হতে পারে চাকরিজীবীর মূল বেতনের শতকরা ১০ ভাগ। অন্যদিকে, সমপরিমাণ টাকা দেবে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ। সরকারি এবং বেসরকারি খাতে একই নিয়মে তহবিল গঠন করা হবে। প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থার আওতায় পেনশনভোগীর বয়স সর্বোচ্চ ৬৫ নির্ধারণ করা হতে পারে।

তহবিল পরিচালনা করবে 'ন্যাশনাল পেনশন অথরিটি'। সরকার তা গঠন করবে। তহবিলে যে টাকা জমা হবে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে এ টাকা বিনিয়োগ করা হবে। এ জন্য সরকার প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেবে। তারা লাভজনক খাতে তহবিলের ওই অর্থ বিনিয়োগ করবে। ওই বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা আসবে, তার অংশ মাসে মাসে পাবেন সুবিধাভোগীরা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কোথায় বিনিয়োগ করা হবে, কী ভাবে করা হবে, সে বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করা হবে। ওই নীতিমালার আলোকে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে।

বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরের পর পেনশন সুবিধা ভোগ করছেন। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতে ক্ষেত্রবিশেষ প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকলেও অবসরের সময়ে মাসে মাসে পেনশন পান না। এ ক্ষেত্রে সমতা ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদেরও পেনশনের আওতায় আনার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ দিতে আসন্ন বাজেটে পদক্ষেপ নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।

সূত্র জানায়, সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতির আওতায়, বেসরকারি পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে বড় বড় করপোরেট হাউস, শেয়ারবাজারে লিস্টেড কোম্পানিতে কর্মরত চাকুরেদের আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাতের প্রতিনিধিদের আনার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, বর্তমানে সরকারি খাতে চাকরিজীবী প্রায় ১৫ লাখ, যা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ ভাগ। তারা সবাই পেনশন সুবিধা পান।

অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের ৯৫ শতাংশের মধ্যে মাত্র আট ভাগ ফরমাল বা আনুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের কোনো পেনশন সুবিধা নেই। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে গড় আয়ু ও প্রবীণের সংখ্যা বাড়ার কারণে সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঝুঁকি মোকাবেলা করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তা প্রতিকারে প্রবর্তন করা হচ্ছে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা।

সূত্র জানায়, সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতির আওতায়, বেসরকারি পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে বড় বড় করপোরেট হাউস, শেয়ারবাজারে লিস্টেড কোম্পানিতে কর্মরত চাকুরেদের আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাতের প্রতিনিধিদের আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল— বেসরকারি খাতে পেনশন দেওয়া। সরকারের এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ২০১৪ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগকে বেসরকারি খাতের জন্য পেনশন স্কিম চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেসরকারি পেনশন বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্প ব্যাংকিং বিভাগ হাতে নেয়। এ লক্ষ্যে প্রায় ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দেয় বিশ্বব্যাংক। অর্থমন্ত্রী সেটি অনুমোদনও দেন। কথা ছিল, সংস্থাটির টাকায় ‘প্রাইভেট পেনশন রেকর্ড কোম্পানি’ ও ‘প্রাইভেট পেনশন ট্রাস্ট’ গঠন করে বেসরকারি খাতকে পেনশন স্কিমের আওতায় আনা হবে।

তবে প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে যখন ডিপিপি চাওয়া হয়, তখনই আপত্তি করে বসে অর্থ বিভাগ। তারা জানায়, যেহেতু সরকারি পেনশন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগ, তাই এটি তাদের (অর্থ বিভাগ) মাধ্যমেই হওয়া উচিত। এরপর থেকে অর্থ বিভাগই দেখছে সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়নের বিষয়টি।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমদিকে বিষয়টি শুধু বেসরকারি খাতের কর্মজীবীদের পেনশন দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল; তবে এখন এটি বৃহত্তর পরিসরে সব নাগরিকের জন্য পেনশন স্কিম চালুর সিদ্ধান্তে রূপ নিয়েছে। ফলে এটি বাস্তবায়ন করতে আরও সময় লাগবে। সর্বজনীন পেনশন চালুর জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হবে-সেটিই এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা নেওয়া হচ্ছে।

অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা কীভাবে চালু করা যায়, তার প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোই-বা কী হবে—এসব বিষয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেওয়া হবে। তহবিল গঠন করা কঠিন কাজ নয়, মানুষের সাড়াও মিলবে এতে। কিন্তু সেই তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ হবে কোথায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবা হচ্ছে

সূত্রঃ বাংলাদেশ জার্নাল

No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages