 |
মোঃ গোলজার হোসেন- অনলাইন রাইটার এন্ড কলামিস্ট |
সকলকে আমার ব্লগে স্বাগতম। আশা করি সকলে ভাল আছেন। বর্তমান পৃথিবী বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো বিশ্ব মোড়ল ও তাদের ক্রীড়ানকদের দ্বারা সৃষ্ট এক অশান্ত ও অস্তিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছে। বলা হয়ে থাকে যে, আমরা আরব বিশ্বে যে অস্থিতিশীল ও অশান্ত পরিবেশ লক্ষ্য করছি তার মূলেই রয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট। বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার একচোখা নীতি আর ক্রমাগতভাবে মুল পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলার কারনেই আজ ফিলিস্তিনীরা নিজ দেশে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, যেখানে তারা বহুকাল আগে থেকে বসবাস করে আসছিল। আমি আমার এই লেখনীতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আর তা হল কেন ইসরায়েল আর ফিলিস্তিন দুটি জাতি একটি ভুখন্ডকে নিয়ে তাঁদের নিজ নিজ দাবিতে অনড়? আর কেনই বা ইসরায়েল ফিলিস্তিনীদের অধিকারকে পায়ে দলে একে অপরের অধিকার ছিনিয়ে নিতে তৎপর? আশা করি আমার এই ধারাবাহিক লেখনী আপনাদের জ্ঞান তৃঞ্ষার সামান্যতম হলেও মেটাবে। আর তা পারলেই আমি আমার শ্রমকে স্বার্থক বলে মনে করব। গঠন মুলক মন্তব্য পেলে উৎসাহিত হব।
Zionism বা ইহুদীবাদ ইসরায়েলের একটি জাতীয় আদর্শ । ইহুদীগণ বিশ্বাস করেন যে জুডাইজম শুধুমাত্র একটি ধর্মমত নয় এটি জাতীয়তাবাদও । একটি ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠী কখনোই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না যদি না তার একটা স্বাধীন ভূখন্ড থাকে। আর তাই ইহুদীদের তাদের পূর্ব পুরুষদের আবাসভুমি ইসরায়েলে (তৎকালীন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র) নিজ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার রয়েছে। ফরাসিদের যেমন একটা স্বাধীন আবাসভূমি ফ্রান্স রয়েছে এবং চাইনিজদের যেমন চীন নামের একটা রাষ্ট্র রয়েছে ঠিক ইহুদিদের অর্থাৎ তাদেরও একটা স্বাধীন আবাসভূমি প্রয়োজন যেটি হতে হবে তাদের পূর্ব পুরুষদের পবিত্র ভুমিতে যেখান হতে তাদের বিতাড়িত করা হয়েছিল। এই চেতনাবোধই ইহুদীদেরকে ইসরায়েলে একত্রিত করেছিল। যা সেখানে বসবাসকারী ফিলিস্তিন আরবদের জন্য মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইহুদীরা প্রায়ই খ্রীষ্টপূর্ব ৯৫০ অব্দ আগের রাজা দাউদ ও সুলাইমানের বাইবেলে বর্ণিত রাজ্যের জাতীয়তার কথা বলে।
 |
ইউরোপজুডে নির্যাতিত ইহুদীরা |
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ইউরোপে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটলে ইহুদীদের মধ্যে নিজ ভূমিতে ফেরত("return to Zion") যাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়, জন্ম হয় আধুনিক Zionism বা ইহুদীবাদের। 1896 সালে একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে Theodor Herzl নামে একজন সেকুলার অস্টিও ইহুদি সাংবাদিক প্রথম ইহুদি জাতীয়তাবাদের সূত্রপাত ঘটান। Herzl সেই সময় প্রবল পাশবিক ইউরোপিয়ান ইহুদি বিদ্বেষের সম্মুখীন হয়েছিলেন যা তাকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য করেছিল যে সারা পৃথিবীর ইহুদীরা নিজ দেশ ব্যতীত অন্য কোথাও টিকে থাকতে পারবে না ।
 |
তৎকালীন ইউরোপের ইহুদীবিদ্বেষ |
তিনি এ বিষয় নিয়ে অনেকগুলো নিবন্ধ লিখেছিলেন এবং অনেকগুলো সভা-সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন যা ইউরোপ হতে আজকের ইসরায়েলে গণহারে ইহুদীদের আসতে প্রলুব্ধ করেছিল। Herzl এর পূর্বে থেকেই সেখানে প্রায় 20 হাজার ইহুদি বসবাস করছিল কিন্তু যখন এডলফ হিটলার জার্মানিতে ক্ষমতায় আসলেন তখন এই সংখ্যা গিয়ে এর আটগুন হল। যদিও সকল ইহুদীবাদীরা ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাসী ছিলেন, তথাপি তারা সরকারে রুপরেখা নিয়ে দীর্ঘদিন নিজের মধ্যে মতানৈক্যে ভুগছিলেন। সাধারণত, ইহুদিবাদী বামপন্থী, যারা 1970 এর দশকের শেষের দিকে দেশটির নীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তারা আরব দেশগুলির সাথে শান্তি স্থাপনের জন্য ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রিত ভূখন্ডে ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করতে থাকে। তারা অর্থনীতিতে সরকারের আরও হস্তক্ষেপ চায় এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে সমর্থন করে। আর ডানপন্থি ইহুদীবাদীরা যারা ইসরায়েলের সরকারে ও জনসমর্থনে নেতৃত্ব স্থানে ছিল তারা অর্থনীতিতে আরো উদারবাদী, এবং ধর্ম ও রাজনীতির মধ্যে আরও স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে Land for Peace চুক্তিতে আরো সংশয়বাদী হতে থাকে।
আরব এবং ফিলিস্তিনিরা সাধারনভাবে Zionism বা ইহুদিবাদের বিরোধিতা করেন। কেননা ইসরায়েল নামক এই রাষ্ট্রটির সুষ্পষ্ট ইহুদীবাদী চরিত্র বলতে যা বুঝায় তা হল এতে ইহুদীদের যে সকল সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে তা অন্যদের নেই। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, সারা পৃথিবীর যে কোন স্থানে একজন ইহুদী থাকলেও তিনি এই রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার অধিকার রাখেন। যা অন্যান্য কারো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আরবরা Zionism বা ইহুদীবাদকে প্রায়ই উপনিবেশবাদ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন কারণ ফিলিস্তিনিরা মনে করেন এটার জন্মই হয়েছে ফিলিস্তিনিদের ভূমিকে কেড়ে নেয়া ও রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের মাধ্যমে ফিলিস্তিনীদের উপর দস্যূতা চালানোর জন্য যার উপর তাদেও অধিকার রয়েছে। আরব রাষ্ট্রগুলি আসলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজলুশনের জন্য ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছিল যা 1975 সালে জিয়নবাদ বা Zionism কে "বর্ণবাদ ও জাতিগত বৈষম্যের একটি রুপ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল, যদিও এটি 16 বছর পরে এসে আর আগের অবস্থানে থাকেনি।
To be Continued------>>>>>
No comments:
Post a Comment