বাংলার ফুটবল যাদুকর-সামাদ - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

বাংলার ফুটবল যাদুকর-সামাদ

বাংলার ফুটবল যাদুকর-সামাদ

Share This

গোলাম মুস্তফা, জৈন্তা, সিলেট।

আমাদের ফুটবলার যাদুকর সামাদ:-
সামাদ নামটা শুনলেই চোখের সামনে ফুটবলের কিছু শৈল্পিক দৃশ্য ভেসে উঠে। ফুটবলে শিল্প শব্দটার পরিচিতি যেন সামাদের হাত ধরেই। তিনি উপমহাদেশের ফুটবল ইতিহাসের কিংবদন্তি। পরিচিতি তার ফুটবলার যাদুকর সামাদ হিসেবে। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের ভুরী গ্রামে। এই গ্রামেই ১৮৯৫ সালের ৬ ডিসেম্বর এক নিভৃত পরিবারে তাঁর জন্ম। ‘যাদুকর সামাদ’ নামেও পরিচিত হলেও তাঁর পুরো নাম সৈয়দ আবদুস সামাদ। সামাদ স্বাধীন বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে জন্ম না নিয়েও ১৯৪৭-এর দেশ-বিভাগের পর এই ভূ-খন্ডকেই নিজের দেশ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন । ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে যখন ‘পাকিস্তান’ ও ‘ভারত’ নামক দু’টি দেশ জন্ম নিল, তখন জাদুকর সামাদ চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের  অন্যতম বৃহৎ রেলওয়ে শহর দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। এরপর পুরো জীবনটাই কাটিয়েছেন এখানেই।
খেলার মাঠে প্রতিনিয়ত অবিশ্বাস্য ঘটনার জন্ম দিতেন সামাদ। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল একবার ইন্দোনেশিয়ায়। সর্বভারতীয় ফুটবল দল গিয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার জাভায়। খেলা চলাকালে ইন্দোনেশিয়ার বেশ ক’জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোলপোস্ট লক্ষ্য করে তীব্র শট করলেন সামাদ। বল গোলপোস্টের ক্রসবারে লেগে ফিরে এলো মাঠে। বিস্মিত হলেন তিনি। গোল হলো না কেন? কিছুক্ষণ পর আবারো সামাদের তীব্র শটের বল ইন্দোনেশিয়ার গোলপোস্টের ক্রসবারে লেগে ফিরে এলো। এবার সামাদ রেফারিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন, 'গোলপোস্টের উচ্চতা কম আছে। তা না-হলে, আমার দুটো শটেই গোল হতো' ফিতা দিয়ে মেপে দেখা গেল সত্যিই গোলপোস্টের উচ্চতা স্ট্যান্ডার্ড মাপের চেয়ে চার ইঞ্চি কম রয়েছে! আরেকবার মাঠের মধ্যস্থল থেকে বল নিয়ে সব খেলোয়াড়কে বোকা বানিয়ে বল ড্রিবলিং করে নিক্ষেপ করলেন গোলে, বল গোলে প্রবেশ না করে গোলপোস্টের কয়েক ইঞ্চি উপর দিয়ে বাইরে চলে গেলে রেফারি বাঁশি বাজিয়ে বলকে আউট ঘোষণা করলে সাথে সাথে সামাদ তা গোল হয়েছে বলে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। 'আমার শটে নিশ্চিত গোল হয়েছে'। সামাদের শটের মেজারমেন্ট কোনোদিন ভুল হয়নি। গোলপোস্ট উচ্চতায় ছোট। মেপে দেখা গেল সত্যিই তাই। ফুটবল নিয়ে সেই কিশোর বয়স থেকে অনুশীলন করতে করতে সামাদ পরিণত হয়েছিলেন ফুটবলের এক মহান শিল্পীতে। একবার খেলার আগ মুহূর্তে মাঠের চারদিকে পায়চারী করে এসে সামাদ ক্রীড়া কমিটির কাছে অভিযোগ করলেন এ মাঠ আন্তর্জাতিক মাপ হিসেবে ছোট বিধায় এ মাঠে আমাদের টিম খেলতে পারে না। পরে মাঠ মাপার পর তার অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের এমন বহু ঘটনা আজো দেশ-বিদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অগণিত সামাদ ভক্তের মুখে মুখে আজও ঘুরে বেড়ায়।



যাদুকর সামাদ ১৯১২ সালে কলিকাতা মেইন টাউন ক্লাবে।
এরপরের গল্পটা কেবল সামাদের এগিয়ে চলারই। ১৯১৬ সালে তিনি মাঠে নামেন শক্তিশালী ইংলিশ ক্লাব সামারসেটের হয়ে। তাঁর খেলায় তিনি মুগ্ধ করেন ব্রিটিশদেরও।
তাঁর ক্যারিয়ারও দারুণ সমৃদ্ধ। ১৯২১ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত তিনি খেলেছেন বিখ্যাত ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের হয়ে। ১৯২৭ সালে তাঁর দারুণ এক গোলেই ইংল্যান্ডের ম্যাশউড ফরেস্ট দলের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল।
সামাদ ভারতীয় জাতীয় দলের জার্সি গায়েও খেলেছেন। ১৯২৬ সালে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব। তিনি সে সময় ভারতের হয়ে বার্মা (মিয়ানমার), সিলোন (শ্রীলঙ্কা), সুমাত্রা-জাভা-বোর্নিও (ইন্দোনেশিয়া), মালয় (মালয়েশিয়া), সিঙ্গাপুর, হংকং, চীন ও ইংল্যান্ড সফর করেন। চীনের বিপক্ষে একটি ম্যাচে ভারত ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পরেও তাঁর দেওয়া চারটি গোলে ৪-৩ গোলে অবিস্মরণীয় এক জয় পেয়েছিল। তাঁর খেলা দেখে ওই সময় স্কটিশ এক ফুটবলবোদ্ধার মন্তব্য ছিল, ‘সামাদ ইউরোপে জন্ম গ্রহণ করলে সে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃতি পেত।’
১৯৩৩ সালে ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে মোহামেডান এ যোগদান করেন। সে সময় মোহামেডান পর পর পাঁচবার আইএফএ শীল্ড ও লীগ জয় করে। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর প্রদর্শন করে ফুটবল জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
১৯৩৩ সালে সামাদের নেতৃত্বে সর্বভারতীয় দল গ্রেট বৃটেনকে ৪-১ গোলে এবং শক্তিশালী ইউরোপিয় টিমদের ২-১ গোলে পরাজিত করেছিল। 
১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ছিল সামাদের খেলোয়াড়ী জীবন। তিনি ছিলেন একজন রেল কর্মচারী। সে সময় ইবিআর নামে যে রেলওয়ে ফুটবল টিম ছিল সামাদ তাতে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। সামাদের ২৩ বছর খেলোয়াড়ী জীবনে এমন সব বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে যা তার নামের সামনে যাদুকর শব্দটি বসাতে বাধ্য করেছে। যাদুকর সামাদের কালজয়ী ফুটবল প্রতিভা ও নেতৃত্বগুণ তৎকালীন সর্বভারতীয় ফুটবল দলকে গ্রেট বৃটেনের মতো বিশ্বসেরা ফুটবল দলের বিরুদ্ধে অবিস্মরনীয় জয় এনে দিয়েছিল।

একবার আফ্রিকায় এক সফরের সময় ষড়যন্ত্র করে তাকে অধিনায়ক না-করায়, সামাদ অভিমানে দল থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। সামাদবিহীন সর্বভারতীয় দলটি সেবার তেমন কোনো সাফল্যই দেখাতে পারেনি।

১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারী এই ফুটবলের যাদুকর মৃত্যুবরণ করেন।
পার্বতীপুর শহরের ইসলামপুর কবরস্থানে সমাহিত আছেন ।তাঁর স্মরণে একটি স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার । 

সামাদকে বর্তমান প্রজন্ম চেনেনা, চিনবেই বা কি করে সামাদকে চেনার জন্য যে উদ্যোগ দরকার তা বাফুফেরই নেওয়া উচিত। সেই সাথে প্রাথমিক কিংবা মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকে যাদুকর সামাদের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।#

No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages