সকলকে আমার ব্লগে স্বাগতম। আশা করি সকলে ভাল আছেন। বর্তমান পৃথিবী বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো বিশ্ব মোড়ল ও তাদের ক্রীড়ানকদের দ্বারা সৃষ্ট এক অশান্ত ও অস্তিতিশীল পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছে। বলা হয়ে থাকে যে, আমরা আরব বিশ্বে যে অস্থিতিশীল ও অশান্ত পরিবেশ লক্ষ্য করছি তার মূলেই রয়েছে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট। বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার একচোখা নীতি আর ক্রমাগতভাবে মুল পরিস্থিতিকে এড়িয়ে চলার কারনেই আজ ফিলিস্তিনীরা নিজ দেশে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে, যেখানে তারা বহুকাল আগে থেকে বসবাস করে আসছিল। আমি আমার আজকের এই লেখনীতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আর তা হল কীভাবে কোন পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরায়েল নামক ইহুদি রাষ্ট্রটির জন্ম হল। আশা করি আমার এই ধারাবাহিক লেখনী আপনাদের জ্ঞান তৃঞ্ষার সামান্যতম হলেও মেটাবে। আর তা পারলেই আমি আমার শ্রমকে স্বার্থক বলে মনে করব। গঠন মুলক মন্তব্য পেলে উৎসাহিত হব।
 |
Arab Israel war in 1948 |
আমি পূর্বের অধ্যায়ে বলেছি 1948 সালের আরব ইসরাইল যুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জীবনের এক মহাবিপর্যয়ের সময়। ওই যুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়। এই যুদ্ধের ফলস্বরূপ প্রায় সাত লাখ ফিলিস্তিনি তাদের নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয় ফিলিস্তিনিদের আকাশ নেমে আসে ঘোর অন্ধকার । সৃষ্টি হয় ইতিহাসের সব থেকে বড় রিফিউজি সমস্যার যে সমস্যার আজও কোন সুরাহা তো হয়নি বরং উত্তরোত্তর এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দাড়িয়েছে। আলোচনার নামে চলেছে প্রহসন। ফিলিস্তিনিরা তাদের নিজ ভূমি হতে এই গণহারে উচ্ছেদ করাকে ‘Nakba" বলে থাকেন। Nakba শব্দটি আরবি শব্দ যার অর্থ হল মহাবিপর্যয়। আর চলমান শান্তি আলোচনায় রিফিউজি সমস্যাটি আজ ও অধরাই রয়ে গেছে। বরং দিনকে দিন এই রিফিউজি সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে, দিনকে দিন নতুন করে ফিলিস্তিনীরা তাঁদের ঘর ভিটে-মাটি হারাচ্ছে।
আশ্চর্য হবার কিছু নাই যে, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলীরা এই রিফিউজি সংকটকে তাদের নিজ নিজ দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে বিচার করার চেষ্টা করে। ফিলিস্তিনিরা এটিকে প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিন রাষ্ট হতে তাদের পুরোপুরি জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করার পুর্ব-পরিকল্পিত ইহুদিবাদী অভিযান হিসেবে দেখেন। আর ইহুদীরা এটিকে আরবদের অর্থাৎ আরব সেনাবাহিনীর লেজগুটিয়ে পলায়ন এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ যুদ্ধকালীন দুর্ঘটনা যা তাদের র্পবপুরুষদের ভুমিতে ফিরে আসতে ও স্বপ্নের ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছে।
সেদিনের সেই সাত লাখ রিফিউজির সংখ্যা আজ বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০ লাখ(৭ মিলিয়ন)। 1948 সালের সেই ভয়াবহ ঘটনাটিই তাদের আজ তাদের নিজ দেশ ও বংশধরদের নিকট হতে বিচ্ছিন্ন করেছে। আজও প্রতিদিন সারা বিশ্বথেকে ইহুদী পুনর্বাসনের নামে ফিলিস্তিনীদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্যদিকে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে প্রাসাদ-পোদম বিলাসবহুল ইহুদী বসতি গড়ে তোলা হচ্ছে তৌরাতে বর্ণিত ইসরায়েল নামের স্বর্গ রাজ্য। আজ শান্তি আলোচনার নামে চলছে কালক্ষেপণ আর পরাধীন ফিলিস্তিনিদের ভুমি দখল। শান্তি আলোচনায় আজ লক্ষ লক্ষ রিফিউজি ফিলিস্তিনের প্রাণের দাবী একটাই যা অত্যন্ত যৌক্তিক আর তা হল স্বাধীন ফিলিস্তিন বা স্বাধীন ইসরায়েল, রাষ্ট্রের নাম যাই হউক না কেন, সেই স্বর্গ রাজ্যে যেন ৭০ বছর ধরে বঞ্চিত ফিলিস্তিনিদের নিজ ভুমিতে ফিরে আসার অধিকারটুকু দেওয়া হয়।

কিন্তু দখলদার ইহুদীরা কি সেই ফিলিস্তিনিদের এই দাবী মেনে নেবে? না তা কখনোই মেনে নেবে না কারন একটি ইহুদীবাদী রাষ্ট্র বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যে নামেই হউক তারা যদি এই ৭ মিলিয়ন বা ৭০ লাখ ফিলিস্তিনিদের তার নিজ ভিটে-মাটিতে ফিরতে দেয়, তাহলে তাদের স্বপ্নের স্বর্গ রাজ্য ইসরায়েলে তারা শেষ মেষ সংখ্যালঘুতে পরিনত হবে। ইসরায়েলের বতমান জনসংখ্যা ৮ মিলিয়ন যার মধ্যে ১.৫ মিলিয়ন আরব ফিলিস্তিনি সেখানে ইতোমধ্যে ভাল-মন্দ যে হালেই হোউক বসবাস করছে। অতিরিক্ত এই ৭ মিলিয়ন রিফিউজি ফিলিস্তিনি এই জনসংখ্যার সাথে যোগ হলে অবস্থাটা কি হবে ইসরায়েলীদের একবার ভাবুন। তাইতো শান্তি আলোচনার নামে চলে কালোক্ষেপণ আর সেই সুযোগে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আর পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থাকা ইহুদিদের এই এই রাষ্ট্রে এনে তাদের আবাসন করে দেওয়া হয়। ১৯৪৮ সালে ঘটে যাওয়া সেই মহাবিপর্যয় বা নাকবা ফিলিস্তিনিদের নিজভুমিতে করে রেখেছে পরবাসী, আর ৭০ লাখ ফিলিস্তিনিদের করে দেশ ছাড়া । সত্যিই এ এক মহাবিপর্যয় (নাকবা) !
No comments:
Post a Comment