প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা (প্রজ্ঞাপণ) - ২০১৯ : প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি ! - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা (প্রজ্ঞাপণ) - ২০১৯ : প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি !

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা (প্রজ্ঞাপণ) - ২০১৯ : প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি !

Share This

প্রাথমিক শিক্ষায় সংকটের শুরু  কবে থেকে বলতে পারবেন কি?  আর প্রাথমিক শিক্ষার সংকট টি আসলে কতটুকু প্রবল? আসলে আমি এটিকে সংকট বলব না সমস্যা বলব এটাই বুঝ উঠতে পারছিনা। সমস্যা বললে এর ব্যপ্তিটা হয়ত অনেক খানি বেশি হয়ে যাবে। সমস্যা বলতে প্রাথমিক শিক্ষায় বিদ্যমান সকল সমস্যাকেই হয়তবা বলা হবে। এই যেমন ধরুন শিক্ষকের চাকুরি ও চাকুরী সংক্রান্ত সমস্যা, শিক্ষার্থী সমস্যা, ভৌত অবকাঠামোগত সমস্যা, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যমান সমস্যা, অনিয়ম-দুর্নীতি, বেতন বৈষম্য ইত্যাদি। 

হাজারো এধরনের সমস্যার মাঝে আমি আজ একটি সমস্যা অর্থাৎ বেতন বৈষম্য এবিষয় নিয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো। বেতন বৈষম্যের বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষার উপরের স্তর গুলোতে ততটা প্রবল না হলেও প্রাথমিক শিক্ষার একেবারে নিচের স্তরে অবস্থানকারী শিক্ষকগণ তথা সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মাঝে এ বৈষম্য ধীরে ধীরে প্রবলতর ও ঘণীভূত হয়। আসলে বেতন ও জীবনযাত্রার মান নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকগণ কখনোই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলনা। আর বেতন বৈষম্য কখন সবচেয়ে প্রবলাকার ধারণ করে তা আমরা যাঁরা এই পেশায় আছি তারা সকলেই জানি। বেতন ও জীবন যাত্রার মানের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ব সকল সহকারী ও প্রধান শিক্ষক যখন ঢাকায় মহাসমাবেশে জমায়েত হন তখন সহকারী শিক্ষকগণ প্রায় একরকম খালি হাতে ফিরে আসেন, আর মাননীয়  প্রধান মন্ত্রী  প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদটিকে দ্বিতীয় শ্রেনীর মর্যাদাদানের ঘোষণা দেন। সহকারী শিক্ষকদের  মাঝে চরম ক্ষোভ ও বৈষম্যের দাবানল দানা বাঁধতে থাকে।  একই সাথে যুগপথ আন্দোলন করে আন্দোলনের ফসল শুধু সম্মানিত প্রধান শিক্ষকরা পায়। শুরু হয় সহকারি শিক্ষকদের মাঝে বঞ্চনার দহন। এমনিতেই আমলা তান্ত্রিক ও আইনি জটিলতায় দীর্ঘ ১৭-১৮ বা তার থেকেও অধিক কাল সহকারী শিক্ষকগণ পদন্নতি হতে বঞ্চিত। তার উপর ৫০ টাকার বেতন  ব্যবধান যখন স্কেল বা গ্রেডেই বেড়ে দাঁড়ায় ২,৩০০ টাকায় তখন প্রাথমিকের সহকারি শিক্ষকরা নিজেদের বঞ্চিত ও প্রতারিত ভাবতে থাকে। নিচের চিত্রে বিষয়টি আপনার ভাল ভাবে বুঝতে পারবেন। 


এবারে আসি একটু অন্য প্রসঙ্গে ;  বার বার বেতন বৈষম্যের বিষয়টি আনায় হয়ত আপনারা ভাবছেন প্রাথমিক শিক্ষায় আমি আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অবদানকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা। আসলে বিষয়টি তা নয়। আমাদের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী অনেক বড় মনের মানুষ তাঁর বাবার মতোই বিশাল তার মনোজগৎ। সহকারি শিক্ষকদের জন্য তিনি কিছুই করেননি এই কথাটি বললে তাঁর প্রতি অবিচার করা হবে। এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৩ সালে দেশের ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রথম জাতীয়করণ করে সকল প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর গত ৪১ বছরেও দেশে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়নি। তারই পথ ধরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের ২৬ হাজারের বেশি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি  দেশের প্রাথমিক শিক্ষাকে সম্পূর্ণরুপে জাতীয়করণেরও ঘোষণা দেন। এর ফলে এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১ লাখেরও বেশি শিক্ষকের চাকুরী সরকারিকরণ হয় যার সিংহভাগই সহকারি শিক্ষক। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর এই ঘোষনা ও তার বাস্তবায়নে শুরুতে মুলধারার সরকারি শিক্ষক বিশেষ করে সহকারি শিক্ষকগণ আশায় বুক বাঁধেন এই ভেবে যে, নব্যজাতীয়করনকৃত বিদ্যালয়ে সৃষ্ট প্রধান শিক্ষকের শুন্য পদগুলোতে সহকারিদের মধ্য হতে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে ও সেই সাথে তাদের দীর্ঘ ১৭-১৮ বছরের বন্ধ হয়ে থাকা  প্রমোশনের জট খুলবে। কিন্তু না, কোন নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে নব্য জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের স্ব-পদে স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে বহাল রাখা হলো যা বাংলাদেশের ইতিহাঁসে নজিরবিহীন! এই মহৎ কাজটি নিশ্চয় এমনি এমনি হয়নি! এ জন্য নিশ্চয় আমাদের বর্তমান সরকার দায়ী নয়। তাহলে কে দায়ী?  এই প্রশ্নের উত্তর যেমন আমি জানি, তেমনি আপনারাও জানেন। যেখানে শিক্ষকদের জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজ মুখে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেনীর মর্যাদা দিলেন যার পুর্ন বাস্তবায়ন আজও হয়নি। এ জন্য দায়ী কে? এ প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা।  এখানেই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। এই আমলাতন্ত্র বা ছায়া সরকারের ভেল্কিবাজিতেই আমাদের দাবীগুলো গুমরে গুমরে কাঁদে। রাজনৈতিক সরকারের সদিচ্ছােই এখানে শেষ কথা নয়। প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক পদটির পূর্ন দ্বিতীয় শ্রেনীর মর্যাদা নিয়ে তৈরী হয় ধোঁয়াশা। এখানেই শেষ নয় এর মধ্যে মিস্টার টুইস্ট হিসেবে আবির্ভুত হন বিসিএস নন ক্যাডারগন। সরকার হঠাৎ করেই বেশ কয়জন বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়। সরকারের এই হেন সিদ্ধান্তে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকগনের দ্বিতীয় শ্রেণী উন্নীত হওয়ার বিষয়টি আস্তে আস্তে একটি পরিণতির দিকে এগুতে থাকে।  আর এত সব চাওয়া পাওয়ার মাঝে প্রাথমিকের সহকারিরা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়েই সংকটে পড়ে যায়। তাদের তখন একটাই দাবী- ‘প্রথম শ্রেনী কিংবা দ্বিতীয় শ্রেনী বুঝিনা আমাদের দাবী বেতন বৃদ্ধি নয়; আমাদের বেতন বৈষম্যের অবসান চাই। সরকার প্রধান শিক্ষকদের কোন শ্রেনীর মর্যাদা দিচ্ছে দিক, আমাদের কেবল একধাপ নিচে যেন বেতন নির্ধারণ করা হয়।’   সহাকারীদের এই দাবী ১০০ ভাগ যৌক্তিক বলে আমি মনে করি। আর বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় যে বিশৃংখলা চলছে তা সরকার ও আমলাদের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও হঠকারিতারই ফল। 

সরকার দেরিতে হলেও প্রাথমিকের সহকারিদের বিষয়টির যৌক্তিকতা হয়তবা বুঝতে পেরেছে বলে আমার মনে হয়। এই বিষয়টি স্পষ্ট হয় তখন যখন আমরা বর্তমান সরকারকে তার নির্বাচনী ইশতেহারে সহকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে দেখি। আর সর্বশেষ প্রমাণ তো পেলাম গত ৪ঠা এপ্রিল জারি করা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা বা প্রজ্ঞাপণে। এই নিয়োগ বিধিতে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি শিক্ষক নিয়োগে একই যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপণের ফলে তো সহকারি শিক্ষকরা এখন যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষকের সমান স্কেলে বেতন দাবি করতেই পারে।  এই প্রজ্ঞাপণে বেতন বৈষম্যের অবসানের ইঙ্গিত থাকলেও বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, আর তা হলো-
  • প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষগণ কি তাদের প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় শ্রেনীর বেতন ও পুর্ণ মর্যাদা পাবেন?
  • প্র্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির দ্বার কি তবে একেবারে বন্ধ হয়ে গেল?
  • সহকারি শিক্ষকদের বেতন তাহলে কোন ধাপে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে?
  • প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে উপরের পদ গুলোতে ১০০ ভাগ প্রমোশনের দাবী কি তা হলে মানা হলো না?
  • সহকারি থেকে প্রধান শিক্ষকে প্রোমশনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদন্ড তাহলে কি হবে? 
  • এইচএসসি পাস করা সহকারি শিক্ষক তাঁর যদি চাকুরীকাল সাত বছর বা তার অধিক হয় তবে কি তিনি প্রধান শিক্ষক পদে প্রমোশনের যোগ্য হবেন? 
  • যদি তাই হয় তবে এসএসসি পাশ করা কোন সহকারি শিক্ষক কেন নয়?
যাই হোউক প্রজ্ঞাপণ সবে মাত্র প্রকাশিত হলো এখনই তড়িত সমাধান হয়তবা আমরা কেউই আশা করি না। পরবর্তীতে স্পষ্টীকরণ আসলে উপরের সকল প্রশ্নের উত্তর একে একে পাওয়া যাবে। কিন্তু স্পষ্টী করণের নামে আর কোন বিলম্ব শিক্ষক সমাজ দেখতে চায় না। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে প্রজ্ঞাপণ বা প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা -২০১৯ এর ঝকঝকে পিডিএফ দিলাম। যাদের প্রয়োজন তারা ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

গোলজার হুসেইন
সহকারি শিক্ষক ও এডমিন
ইনফোটেকলাইফ.কম
মোবাইলঃ 01712249709
ইমেইল: amiodhara4u@gmail.com
ইউটিউব: https://www.youtube.com/techyoutube


নিচের  এই  প্রজ্ঞাপণটি ডাউনলোড করতে, পপ আউট বাটনটিতে ক্লিক করুন, 

দেখবেন আপনি Pdf পেইজটিতে পৌছেগেছেন, সেইখানেই ডাউনলোড লিংক পাবেন। ডান পাশে থাকা ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন।

[ বি:দ্র:- অবশ্যই প্রিন্ট করার সময় ৯/১৪ সাইজের কাগজ  দিয়ে প্রিন্ট করবেন।]



No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages