বাবরি মসজিদ- কী,কেন, কীভাবে এবং কোন পথে এর ঘটনা প্রবাহ? - ICT-তে জীবন গড়ি

Infotech Ad Top new

Infotech ad post page Top

বাবরি মসজিদ- কী,কেন, কীভাবে এবং কোন পথে এর ঘটনা প্রবাহ?

বাবরি মসজিদ- কী,কেন, কীভাবে এবং কোন পথে এর ঘটনা প্রবাহ?

Share This

দুই যুগ পেরিয়ে গেছে, ভারতের অযোধ্যায় নির্মিত ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে ফেলেছে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ওই ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় ভারতে হিন্দু-মুসলিম জাতিগত দাঙ্গায় নিহত হয় দুই হাজারের বেশি লোক, যাদের বেশিরভাগই ছিল মুসলিম। তবে মসজিদ নিয়ে মূল বিতর্ক তথা আইন-আদালত শুরু হয় ৬০ বছর আগে, ১৯৫০ সালে। বিতর্ক বাবরি মসজিদের ২.৭ একর জমি কাদের? বাবরি মসজিদ নির্মাণের আগে; অর্থাৎ ১৫৩৮ সালের আগে জায়গাটিতে কি রাম মন্দির ছিল? ১৯৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর মসজিদের ভেতরে রামের মূর্তি এল কোত্থেকে, আগেই ছিল নাকি রাতের আঁধারে এনে বসানো হয়েছে? দীর্ঘ ৮৬ বছর পর ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ মামলার রায় হলো শনিবার সরকারি ছুটির দিনে। কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘা না শুকাতেই ভারতের মুসলমানদের উপর এলো আরও এক বড় রকমের ধাক্কা। যে ধাক্কা ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে এবার ব্যাথিত করেছে সারা পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়কে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকারের আরও একটি কুটচাল হিসেবেই দেখছেন। যে বাবরি মসজিদ নিয়ে এত  বিতর্ক আসুন জানি সেই পবিত্র মসজিদের ইতিহাস। 

বাবরি মসজিদের জন্ম 


১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে পা রাখেন প্রথম মুঘল সম্রাট জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর। আরো কিছু অঞ্চল জয় করে ১৫২৭ সালে মধ্য-ভারত থেকে উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা অতিক্রমের সময় বাবর চিতোরগড়ের রানা সংগ্রাম সিংকে সিক্রিতে পরাস্ত করেন। অধিকৃত অঞ্চলে সেনাপতি মীর বাকিকে প্রশাসকের দায়িত্বে রেখে যান বাবর। সেনাপতি মীর বাকি ১৫৩৮ সালে অযোধ্যায় বাবরের নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। সেটিই বাবরের মসজিদ বা বাবরি মসজিদ নামে পরিচিত। তবে অনেকের মতে, বাবর নিজেই এ মসজিদ নির্মাণ করেন। 

মসজিদের নির্মাণকৌশল

দিল্লির সুলতানি এবং তার উত্তরাধিকারী মুঘল সাম্রাজ্যের শাসকরা শিল্প এবং স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তাদের নির্মিত অনেক সমাধি, মসজিদ ও মাদ্রাসা সূক্ষ নির্মাণকৌশলের নিদর্শন বহন করে। মুঘলদের স্থাপত্য তুঘলক রাজবংশের স্থাপত্যের প্রভাব বহন করে যার একটি স্বতন্ত্র গঠনশৈলী আছে। ভারতের সর্বত্র, মসজিদসমূহের ভিন্ন ভিন্ন গঠনশৈলী আছে যা বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়েছিল। এই নির্মাণগুলির মধ্যে আদিবাসী শিল্প ঐতিহ্য এবং স্থানীয় কারিগরদের মার্জিত শৈলী ও দক্ষতা উভয়ই প্রকাশ পায়। মসজিদের নির্মাণে আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক জলবায়ু, ভূখণ্ড, উপকরণ ইত্যাদি প্রভাব ফেলতো যার ফলে বঙ্গ, কাশ্মীর ও গুজরাটের মসজিদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। মসজিদগুলি শুধুমাত্র স্থানীয় মন্দির বা গার্হস্থ্য গঠনশৈলীর মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। বাবরি মসজিদ জানপুরের সুলতানি স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে। বাবরি মসজিদ তার সংরক্ষিত স্থাপত্য ও স্বতন্ত্র গঠনশৈলীর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মসজিদটি সম্রাট আকবর দ্বারা গৃহীত ইন্দো-ইসলামী গঠনশৈলীর প্রতীক ছিল।

বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরীণ শব্দ-নিয়ন্ত্রণ এবং শীতলীকরণের ব্যবস্থা

লর্ড উইলিয়াম বেন্টিকের (১৮২৮-১৮৩৩) স্থাপত্যশিল্পী গ্রাহাম পিকফোর্ডের মতে,

"A whisper from the Babri Masjid Mihrab could be heard clearly at the other end, 200 feet [60 m] away and through the length and breadth of the central court"

বাবরি মসজিদের স্বনবিদ্যা প্রসঙ্গে তার বই Historic Structures of Oudhe -এ পাওয়া যায়,

"for a 16th century building the deployment and projection of voice from the pulpit is considerably advanced, the unique deployment of sound in this structure will astonish the visitor"

আধুনিক স্থপতিদের মতে বাবরি মসজিদের চিত্তাকর্ষক স্বনবিদ্যার কারণ হল মসজিদটির মিহরাব (মসজিদের একদিকে একটি অর্ধবৃত্তাকার দেয়াল যেটি ক্বিবলা নির্দেশ করে) ও পার্শ্ববর্তী দেয়ালগুলিতে বিভিন্ন খাঁজ যা অনুনাদক হিসাবে কাজ করত। এই নকশা মেহরাবে অবস্থিত ইমামের কথা (উপাসনা) সবাইকে শুনতে সাহায্য করত। এছাড়াও বাবরি মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বেলেপাথর অনুনাদের কাজ করে যা মসজিদটির শব্দ-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করত।

মুসলিম-হিন্দু-জৈন বিতর্ক 

প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর বা তার প্রতিনিধি মীর বাকি; যেই মসজিদটি নির্মাণ করে থাকুন না কেন, মসজিদটির জন্মের সোয়া ৩০০ বছর পর উনিশ শতকের মাঝামাঝি জমিটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, অযোধ্যার ওই স্থানটি তাদের দেবতা রামের জন্মভূমি। তাদের দাবি, মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে রামমন্দির ভেঙে। তবে জায়গাটির দাবিদারদের মধ্যে রয়েছে হিন্দু, মুসলিম ছাড়াও জৈন সম্প্রদায় রয়েছে। 



হিন্দুদের দাবি, ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভাঙার পর সেখানে ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাচীন মন্দিরের ২৬০টি উল্লেখযোগ্য নমুনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে পাথরের এক বিশাল খ-ে নাগরি লিপিতে সংস্কৃত ভাষায় লেখা ২০টি পঙক্তি এবং ৩০টি শ্লোক। 

জৈনদের মতে, ১৮ শতকে তাদের পাঁচজন তীর্থঙ্কর এ স্থানে অবস্থান করেছিলেন। তাছাড়া ১৫২৭ সালের আগে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের পাঁচটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রের মধ্যে অযোধ্যাও একটি। 

আর মুসলিমদের মতে, বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতর্ক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ইসলামবিদ্বেষী। অর্থাৎ সবপক্ষই জায়গাটিকে নিজেদের ধর্মীয় স্থাপনা দাবি করে মসজিদটির জায়গা দখলে নিতে চেয়েছে বিভিন্ন সময়। 

অসন্তোষ-দাঙ্গা-দখল 

বাবরি মসজিদ নিয়ে উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকেই চলছে অসন্তোষ, দাঙ্গা ও মামলা। জমি নিয়ে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে প্রথম অসন্তোষ দেখা দেয় ১৮৫৩ সালে। হিন্দুদের একটি গ্রুপ মসজিদটিকে রামমন্দিরের ওপর নির্মিত বলে দাবি করে। দু’বছর শুধু এ নিয়েই দেন-দরবার চলতে থাকে। ১৮৫৭ সালে এ নিয়ে দেখা দেয় দাঙ্গা। 


১৯০৫ সালের ফয়জাবাদ জেলা গেজেটে বলা হয়, ‘১৮৫৫ সাল থেকে হিন্দু ও মুসলিম উভয়েই স্থাপনাটি (মসজিদ) যার যার ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করছিল। কিন্তু ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর প্রশাসন মসজিদের সামনে একটি বেষ্টনী তৈরি করে এবং হিন্দুদের মসজিদের ভেতরের আঙিনায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। হিন্দুরা এতে মসজিদের বাইরের আঙিনায় একটি বেদী স্থাপন করে পূজা করে।’ অর্থাৎ মসজিদের ভেতরের অংশ ব্যবহার করছিল মুসলিমরা আর বাইরের অংশ হিন্দুরা। এরপর হিন্দুরা ১৮৮৩ সালে বাইরের অংশের বেদীতে মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ১৮৮৫ সালে প্রশাসন তা স্থগিত করে। পরের বছর দু’দফা মন্দির নির্মাণের অনুমতি চাওয়া হলেও জেলা আদালত তা খারিজ করে দেয়। এতে হিন্দুদের আইনগত লড়াই প্রায় ফুরিয়ে যায়। ১৯৩৪ সালে আরেক দফা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মসজিদটির চারপাশের দেয়াল ও একটি গম্বুজ ভেঙে ফেলা হয়।

বৃটিশরা তা নির্মাণ করে। পরে মসজিদ ও তৎসংলগ্ন কবরস্থানকে ওয়াকফ হিসেবে রেজিস্ট্রি করা হয়। ওই সময় মুসলিমদের ওপর চালানো নির্যাতন ১৯৪৯ সালে লিপিবদ্ধ করেন ওয়াকফ পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি জানান, ‘মসজিদে যাতায়াতকারী মুসল্লিদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা হতো। ছুড়ে মারা হতো জুতা ও পাথর। মুসলিমরা প্রাণভয়ে টু শব্দটিও করত না। এরপর ১৯৪৯ সালের ২২ ডিসেম্বর গভীর রাতে একদল হিন্দু সঙ্গোপনে রাম ও সীতার মূর্তি মসজিদের ভেতর প্রতিষ্ঠা করে। বলা হয়, মসজিদ প্রহরারত পুলিশ তখন ঘুমিয়ে ছিল। সকালে ৫-৬ হাজার হিন্দু বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে মসজিদে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের কোনোমতে ঠেকাতে সক্ষম হয়। স্থায়ীভাবে মসজিদের গেট বন্ধ করে দেয়া হয়।’ 

চার দফা মামলা 

গোপাল সিং বিশারদ : ১৯৫০ সালের ১৬ জানুয়ারি গোপাল সিং বিশারদ নামে এক ব্যক্তি প্রথম মামলা করেন। তিনি মারা যাওয়ার পর মামলার বর্তমান বাদি তার ছেলে রাজেন্দ্র সিং। মামলার আর্জি ছিল, কোনো বাধাবিঘœ ছাড়াই ওই স্থাপনায় শুধু হিন্দুদের প্রবেশাধিকার থাকবে এবং ভেতরের রাম-সিতা মূর্তি কেউ অপসারণ করতে পারবে না এবং মসজিদের দরজা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। 

নির্মোহি আখড়া : ১৯৫৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর মোহান্ত রঘুনাথ দাসের মাধ্যমে মামলা করে নির্মোহি আখড়া। রঘুনাথও বর্তমানে প্রয়াত। মামলার আর্জিতে বলা হয়, ওই জমির দায়দায়িত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে নির্মোহি আখড়ার মোহান্ত রঘুনাথকে দেয়া হোক। 



সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড : ১৯৬১ সালের ১৮ ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশ রাজ্যের কেন্দ্রীয় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডে সেক্রেটারিসহ ১০ জন মামলা করেন। তারা আর্জিতে জানান, ওই স্থাপনা অবশ্যই মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং সংলগ্ন জমি থাকবে মুসলিমদের করবস্থান। আর মালিকানা দিতে হবে ওয়াকফ বোর্ডকে। 

আগরওয়াল : এরপর ১৯৮৯ সালের ১ জুলাই দেবতা রামের পক্ষে এলাহাবাদ হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি দিওকি নন্দন আগরওয়াল মামলা করেন। তিনি দাবি জানান, জমি ও স্থাপনা দেবতা রামের। সেখানে প্রবেশ ও হস্তক্ষেপ করতে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে ‘ইনজাংশন’ জারি করা হোক। আর বাবরি মসজিদের কাঠামো ভেঙে ফেলা হোক। 

বাবরি মসজিদ ধ্বংস 


এদিকে ১৯৪৯ সালে মসিজদের ভেতরে রামের মূর্তির রাখার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওয়াহরলাল নেহরু মূর্তিগুলো সরানোর জন্য নির্দেশ দিলেও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তা অমান্য করেন। অন্যদিকে ১৯৮৪ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের তালা খোলার জন্য জোর আন্দোলন শুরু করে। এরপর ১৯৮৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী খোলার নির্দেশ দেন। এতে মসজিদটি সব হিন্দুর জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। এটি অনেকটাই মন্দিরে পরিণত হয়। এ ঘোষণার আগ পর্যন্ত সেখানে প্রতিষ্ঠিত মূর্তিগুলোর সামনে একজন পূজারী ব্রাহ্মণ কেবল একবার বার্ষিক পূজাপর্ব সম্পন্ন করতে পারতেন। ১৯৮৯ সালে সাধারণ নির্বাচনের আগে মসজিদের সামনে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুমতি দেয়া হলে জাতিগত বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এর মধ্যেই বিজেপি নেতা এল কে আদভানি অযোধ্যার উদ্দেশে এক হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমণের এক রথযাত্রার উদ্বোধন করেন। এরপর বিজেপি ও আরএসএস বা করসেবকদের নেতৃত্বে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ মসজিদ ভাঙা হয় । 

লিবারহান তদন্ত কমিশন 

মসজিদটি ধ্বংসের ১০ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর গঠিত লিবারহান কমিশন ১৬ বছর পর ২০০৯ সালের ৩০ জুন তার রিপোর্ট দেয়। গণমাধ্যমে নভেম্বরে ওই রিপোর্টের বিষয়বস্তু ফাঁস হয়ে যায়। এতে দেখা যায়, ঘটনার সঙ্গে তৎকালীন ভারতীয় সরকার ও প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা ঘনিষ্ঠভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত। মসজিদ ভাঙার দিন বিজেপি নেতা এল কে আদভানি ও অন্যরা বিনয় কাতিয়ার বাসায় মিলিত হন। সেখান থেকে তারা যান মসজিদ প্রাঙ্গণে স্থাপিত পূজা বেদীতে। আদভানি, মুরলি মনোহর যোশী ও কাতিয়া ২০ মিনিট ধরে ধ্বংসের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। পরে যোশী ও আদভানি ২০০ মিটার দূরে রাম কথাকুঞ্জে অবস্থান নেন। ওই কুঞ্জে একটি উঁচু বেদীও তৈরি করা হয় তাদের জন্য। করসেবকরা দুপুরে মসজিদ ভাঙতে গেলে কেউই তাদের বাধা দেয়নি। এ সময় আদভানির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার অঞ্জু গুপ্তা লিবারহান কমিশনকে জানান, আদভানি ও যোশীর বক্তব্য ছিল উত্তেজনাকর। রিপোর্টে বলা হয়, ‘রাম কথাকুঞ্জে ওই ঘটনার হোতারা অবস্থান করছিলেন। তারা চাইলে খুব সহজেই করসেবকদের নিবৃত্ত করতে পারতেন।’ একইভাবে উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংও নানাভাবে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করেন। বিজেপি নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ীকেও দায়ী করা হয় ওই রিপোর্টে। 

প্রকাশিত লিবারহান কমিশনের প্রতিবেদনে মসজিদ ধ্বংসের পেছনে বিজেপি'র শীর্ষ রাজনীতিবিদদের ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয় এবং এনিয়ে সংসদে হট্টগোল হয়।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর, আল্লাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেয় যে স্থানটির নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করে দেয়া উচিত। কোর্টের রায় অনুযায়ী এক-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের, এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদের এবং বাকি অংশ 'নির্মোহী আখারা' গোষ্ঠীর কাছে দেয়া উচিত। যেই অংশটি বিতর্কের কেন্দ্র, যেখানে মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল, তার নিয়ন্ত্রণ দেয়া হয় হিন্দুদের কাছে। একজন মুসলিম আইনজীবী বলেন যে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

২০১০ সালের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১১ মে  হিন্দু ও মুসলিম দুই পক্ষই আপিল করায় হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট ।

নভেম্বর ২০১৯: সে জায়গাটিতে মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ের মধ্য দিয়ে আমাদের অখন্ড ভারতের ভাবমূর্তীতে আরও একবার কালিমা লেপন হলো বলে মনে করছেন। হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশটিতে হিন্দুত্ববাদী সরকার মোদীর যে সাম্প্রদায়িক চেহারা আজ বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে। সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তার দর্পণ হিসেবেই কাজ করল বলে মনে করেন অনেকে। এভাবে কি ভারত কী তার অখন্ড চরিত্র ধরে রাখতে পারবে? ঠিক যে সময়টাতে কাশ্মির ও মনিপুর রাজ্য তাদের স্বাধীনতার দাবিতে ভারত থেকে আলাদা হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠছে। 

No comments:

Post a Comment

Infotech Post Bottom Ad New

Pages